আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার থেকে :: সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠী ও সম্পদ সুরক্ষা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে সড়ক কাম বেড়িবাঁধ অর্থাৎ সুপার ডাইক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিতব্য ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের আওতায় সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, ধলঘাটা, মহেশখালী দ্বীপের চারপাশেও ঢাল সুরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণ করা হবে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার সামগ্রিক মান উন্নয়নে প্রতিরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণ’ প্রকল্পের ডিপিপির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এটা বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার জেলার মগনামাঘাট এলাকায় নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন, ধলঘাটা এলএনজি টার্মিনাল ও কোল পাওয়ার স্টেশন, মহেশখালী ও মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম এলাকাসহ ইত্যাদি শিল্প এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পাবে এবং নতুন আন্তঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত বিকল্প ও নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এর আগে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী (মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল) কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ডাইক নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করে পাউবো। ‘
পাউবো সুত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, ধলঘাটা, মহেশখালী দ্বীপের চারদিক এবং মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সর্বমোট ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণ করা হবে। এতে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন সুপাই ডাইকটির প্রস্থ ধরা হয়েছে ৩২ ফুট (৯ দশমিক ৮ মিটার)। প্রকল্পের আওতায় ৩০টি রেগুলেটর ও ৭টি সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ বেশ কয়েকটি স্পটে সৈকতের উন্নয়ন করা হবে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সাগরের দিকে চর এলাকা চিহ্নিত করে টেকসই বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে বন ও সমুদ্রের সম্মিলনের মাধ্যমে ইকো ট্যুরিজম স্পট সৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন দপ্তরে প্রকল্পের কারিগরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ডিপিপি চুড়ান্ত করতে প্রকল্পের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে প্রতিরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় বেল্টের লোকজন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি এতদঞ্চলের শিল্প, কৃষি ও পর্যটন খাতে নতুন বিল্পবের সূচনা করবে বলে মনে করছেন পাউবো কর্মকর্তারা। পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা ইকোনোমিক জোন, চট্টগ্রাম বন্দর, কোরিয়ান ইপিজেড, বাঁশখালী কোল পাওয়ার প্লান্টসহ কক্সবাজার উপকূল প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অলি আফাজ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে সামগ্রিক উন্নয়ন পরিচালিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মীরসরাই হতে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিরক্ষাসহ সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এরপরই ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। নির্মাণাধীন মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনের সুপার ডাইকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে এ প্রকল্পে।’
তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পটিতে ৪৩০ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরু থেকে পাঁচ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রকল্পের অর্থায়নে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নতুন নতুন শিল্পায়নসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতির কক্সবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, প্রতিবছর সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ও উচ্চমাত্রার জোয়ারের ফলে উপকূলীয় এলাকার লবন মাঠ ও চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে শতকোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন চাষী, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। টেকসই সুপার ডাইক নির্মিত হলে উপকূলীয় এলাকার জান-মাল রক্ষা পাবে। এর পাশাপাশি উপকূলীয় বিশাল এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। কক্সবাজার চট্টগ্রাম উপকূল জুড়ে বিস্তৃত দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্যারাবন, চিংড়ি ঘের, লবন চাষ প্রকল্প ও নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী বিদ্যমান। কিন্তু যাতায়ত ব্যবস্হা নাজুক হওয়ায় পিছিয়ে আছে এসব এলাকা। সুপার ডাইক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পর্যটন উপযোগী হোটেল মোটেল কটেজ নির্মান এবং রিভার ক্রুজ, সী ক্রুজ ও স্কুবা ডাইভিংসহ অারো অন্যান্য রাইডের আয়োজন থাকলে এখানে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটবে।
পাঠকের মতামত: